হাদীসের আলোকে আদর্শ স্বামী
হাদীসের আলোকে আদর্শ স্বামী
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١ ﴾ [الروم: ٢١]
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে”। [সূরা : আর্-রূম: ২১]
হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي»
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি”।[1]
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের অর্ধাঙ্গ। মানুষ যেমন তার অর্ধেক অঙ্গ নিয়ে পূর্ণ জীবনের সাধ পেতে পারে না, তেমনি একজন লোক একজন ভাল স্বামী বা স্ত্রী ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না। একে অপরকে যতটা বুঝতে পারবে তাদের জীবন ততটাই সুন্দর ও মধুময় হবে। একজন পুরুষের জীবনে যেমন অন্যতম আশা থাকে ভালো একজন স্ত্রী পাওয়া, তেমনিভাবে একজন মেয়েরও জীবনে সবচেয়ে বড় চাওয়া পাওয়া হলো ভালো একজন স্বামী ভাগ্যে জুটা। একমাত্র একজন আদর্শ স্বামীই পারে তার স্ত্রীর জীবনকে পূর্ণ করে দিতে। স্বামীর বাড়ির লোকজন যতই খারাপ হোক, যতই নিষ্ঠুর হোক, স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বুঝতে পারে, তাকে ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিতে পারে, তবে তাদের সংসার জীবন অনাবিল সুখে ভরপুর হয়ে যাবে। সেখানে পাওয়া যাবে জান্নাতের সন্ধান। এজন্য একজন ভাল স্বামী পাওয়াও কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র মানবজাতির জন্য উত্তম আদর্শ। তিনি একদিকে যেমন একজন নবী-রাসূল, সেনাপতি, রাষ্ট্রপতি, অন্যদিকে তিনি তার স্ত্রীদের নিকট সবচেয়ে ভালোবাসার পাত্র ছিলেন। একজন স্বামী হিসেবে আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যদি আপনার আদর্শ বানাতে পারেন তবে পৃথিবীর সব স্ত্রীরাই সুখী হবেন, আপনার সংসারটা কানায় কানায় ভরে যাবে ভালোবাসায়। আপনি পাবেন আপনার স্ত্রীর সীমাহীন ভালোবাসা, আপনার স্ত্রী আপনাকে নিয়ে সকলের কাছে গর্ব করবে। বলবে, এমনই একজন স্বামী তার জীবনে স্বপ্ন ছিল। স্বামী হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ট মহামানব। কি কি কাজ করলে আপনি একজন আদর্শ স্বামী হবেন এবং স্বামী হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমন ছিলেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা:
আপনি বাইরের কাজ করে এসে দেখলেন আপনার স্ত্রীর রান্না বা অন্যান্য কাজে বিলম্ব হচ্ছে, এতে আপনি ভ্রূকুটি না করে তার কাজে সহযোগিতা করুন, দেখবেন আপনাকে সে কত ভালোবাসে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের ঘরের কাজে সহযোগিতা করতেন।
عَنِ الأَسْوَدِ، قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ، مَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ فِي أَهْلِهِ؟ قَالَتْ: «كَانَ فِي مِهْنَةِ أَهْلِهِ، فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ»
আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তার স্ত্রীদের সাথে কী কী করতেন তা জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, “তিনি স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন, আর যখন নামাযের সময় হতো তখন তিনি নামাযে যেতেন”। [2]
সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতাপ দেখানোর মত লোক ছিলেন না। বরং নিজের কাজ নিজেই করতেন। এ হাদীস দ্বারা তিনি উম্মতকে এ শিক্ষা দিয়েছেন যে, স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে, তাদের সাথে ঔদ্ধত্য আচরণ করা যাবে না।
বাড়িতে নিজের কাজ নিজেই করা:
আপনার স্ত্রী বাড়িতে সন্তান সন্ততি লালন পালন, সাংসারিক কাজ ইত্যাদি ঝামেলায় সব সময় ব্যস্ত থাকেন। ফলে অনেক সময় আপনাকে সময় দিতে পারেন না। তাতে আপনি তার উপর রাগ না করে আপনার ছোট খাট কাজ আপনি নিজেই সেরে ফেলতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাই করতেন।
سَأَلَ رَجُلٌ عَائِشَةَ: أَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْمَلُ فِي بَيْتِهِ؟ قَالَتْ: «نَعَمْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْصِفُ نَعْلَهُ، وَيَخِيطُ ثَوْبَهُ، وَيَعْمَلُ فِي بَيْتِهِ كَمَا يَعْمَلُ أَحَدُكُمْ فِي بَيْتِهِ»
এক লোক আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞেস করলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কি কাজ করতেন? উত্তরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, “হ্যাঁ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন, জুতা মেরামত করতেন এবং পুরুষরা ঘরে যা করে তিনি তা করতেন”।[3]
স্ত্রীকে যথাযথ সম্মান দেওয়া ও পারিবারিক কাজে তার পরামর্শ নেওয়া:
আপনার পরিবারের সব ছোট বড় সিদ্ধান্তে আপনার স্ত্রীর মতামত গ্রহণ করুন। তাকে সম্মান দেখান, দেখবেন সেও আপনাকে অনেক সম্মান করবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের নানা সমস্যা তাঁর স্ত্রীদের কাছে জানাতেন। তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরামর্শ দিতেন। যেমন: হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদের সাথে চুক্তি শেষ করে সাহাবাদেরকে হাদির পশু যবাই করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁরা রাসূলের হিকমত বুঝতে না পেরে যবাই করতে বিলম্ব করেন, এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে উম্মে সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট প্রবেশ ঘটনা জানান। তিনি এ সমস্যা সমাধানে সুন্দর মতামত দেন।
قَالَ عُمَرُ -: فَعَمِلْتُ لِذَلِكَ أَعْمَالًا، قَالَ: فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ قَضِيَّةِ الكِتَابِ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَصْحَابِهِ: «قُومُوا فَانْحَرُوا ثُمَّ احْلِقُوا»، قَالَ: فَوَاللَّهِ مَا قَامَ مِنْهُمْ رَجُلٌ حَتَّى قَالَ ذَلِكَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، فَلَمَّا لَمْ يَقُمْ مِنْهُمْ أَحَدٌ دَخَلَ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، فَذَكَرَ لَهَا مَا لَقِيَ مِنَ النَّاسِ، فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ، أَتُحِبُّ ذَلِكَ، اخْرُجْ ثُمَّ لاَ تُكَلِّمْ أَحَدًا مِنْهُمْ كَلِمَةً، حَتَّى تَنْحَرَ بُدْنَكَ، وَتَدْعُوَ حَالِقَكَ فَيَحْلِقَكَ، فَخَرَجَ فَلَمْ يُكَلِّمْ أَحَدًا مِنْهُمْ حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ نَحَرَ بُدْنَهُ، وَدَعَا حَالِقَهُ فَحَلَقَهُ، فَلَمَّا رَأَوْا ذَلِكَ قَامُوا، فَنَحَرُوا وَجَعَلَ بَعْضُهُمْ يَحْلِقُ بَعْضًا حَتَّى كَادَ بَعْضُهُمْ يَقْتُلُ بَعْضًا غَمًّا
“(এ ঘটনাটি উল্লেখ করে) উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, আমি এর জন্য (অর্থাৎ ধৈর্যহীনতার কাফফারা হিসাবে) অনেক নেক আমল করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, সন্ধিপত্র লেখা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা উঠ এবং যবাই কর ও মাথা কামিয়ে ফেল। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তিনবার বলার পরও কেউ উঠলেন না। তাদের কাউকে উঠতে না দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এসে লোকদের এ আচরণের কথা বলেন। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি যদি তাই চান, তাহলে আপনি বাইরে যান ও তাদের সাথে কোনো কথা না বলে আপনার উট আপনি নাহর (যবেহ) করুন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিন। সে অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে গেলেন এবং কারো সাথে কোনো কথা না বলে নিজের পশু যবাই করলেন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিলেন। তা দেকে সাহাবীগণ উঠে দাঁড়ালেন ও নিজ নিজ পশু কুরবানী দিলেন এবং একে অপরের মাথা কামিয়ে দিলেন। অবস্থা এমন হলো যে, ভীড়ের কারণে একে অপরের উপর পড়তে লাগলেন”। [4]
স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সাথে বদান্যতা ও সুন্দর আচরণ:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সাথে সুন্দর আচরণকারী ছিলেন, তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলতেন, মাঝে মাঝে হাসি ঠাট্টা করতেন, তাদের সাথে ভালোবাসা ও বদান্যতার সাথে আচরণ করতেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে পূর্ণাংগ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যে উত্তম চরিত্রের ও তার পরিবারের সাথে সদব্যবহার করে”। (তিরমিযী)
ইবনে সা‘দ রহ. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে একান্তে অবস্থানকালীন সময়ের স্বভাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি বলেনঃ “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে কোমল ব্যক্তি, সদা সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল, তিনি কখনও তার সঙ্গীদের সামনে (তার শিষ্টাচারিতা ও পরিপূর্ণ সম্মানবোধের কারনে) পা প্রসারিত করে বসতেন না”।
স্ত্রীর উপর অযথা রাগ না করা, তারা রেগে গেলে ধৈর্য্য ধারণ করা:
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَعْلَمُ إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً، وَإِذَا كُنْتِ عَلَيَّ غَضْبَى» قَالَتْ: فَقُلْتُ: مِنْ أَيْنَ تَعْرِفُ ذَلِكَ؟ فَقَالَ: " أَمَّا إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً، فَإِنَّكِ تَقُولِينَ: لاَ وَرَبِّ مُحَمَّدٍ، وَإِذَا كُنْتِ عَلَيَّ غَضْبَى، قُلْتِ: لاَ وَرَبِّ إِبْرَاهِيمَ " قَالَتْ: قُلْتُ: أَجَلْ وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا أَهْجُرُ إِلَّا اسْمَكَ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাক এবং কখন রাগান্বিত হও।” আমি বললাম, কি করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বললেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বল, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের রব-এর কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর্ কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম মুবারক উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি। [5]
প্রেম ও রোমান্টিকতা:
আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে সবসময় ভালোবাসার কথা বলবেন, তাকে রোমান্টিকতা দিয়ে ভরপুর করে রাখবেন। আপনার স্ত্রী হয়ত ঘুরতে পছন্দ করেন, তাকে মাঝে মাঝে দূরে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যান, হারিয়ে যান কোনো অজানা প্রান্তে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদেরকে অনেক সফরে নিয়ে যেতেন।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: «كُنْتُ أَشْرَبُ وَأَنَا حَائِضٌ، ثُمَّ أُنَاوِلُهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَضَعُ فَاهُ عَلَى مَوْضِعِ فِيَّ، فَيَشْرَبُ، وَأَتَعَرَّقُ الْعَرْقَ وَأَنَا حَائِضٌ، ثُمَّ أُنَاوِلُهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَضَعُ فَاهُ عَلَى مَوْضِعِ فِيَّ»
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হায়েজ অবস্থায় পানি পান করে সে পাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। আমার মুখ লাগানো স্থানে তিনি তাঁর মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আমি হায়েজ অবস্থায় হাড়ের টুকরা চুষে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। তিনি আমার মুখ লাগানো স্থানে তার মুখ লাগাতেন। [6]
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: خَرَجْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأنا خَفِيفَةُ اللَّحْمِ فَنَزَلْنَا مَنْزِلًا فَقَالَ لِأَصْحَابِهِ: «تَقَدَّمُوا» ثُمَّ قَالَ لِي: «تَعَالَيْ حَتَّى أُسَابِقَكِ فَسَابَقَنِي فَسَبَقْتُهُ» ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ فِي سَفَرٍ آخَرَ، وَقَدْ حَمَلْتُ اللَّحْمَ فَنَزَلْنَا مَنْزِلًا فَقَالَ لِأَصْحَابِهِ: «تَقَدَّمُوا» ثُمَّ قَالَ لِي: تَعَالَيْ أُسَابِقُكِ " فَسَابَقَنِي فَسَبَقَنِي فَضَرَبَ بِيَدِهِ كَتِفِي وَقَالَ: «هَذِهِ بِتِلْكَ»
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক অভিযানে বের হলাম, তখন আমি অল্প বয়সী ছিলাম, শরীর তেমন মোটা ছিল না। তিনি তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা আগে চল, ফলে তারা এগিয়ে গেল। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, এসো আমরা দৌঁড় প্রতিযোগিতা দেই, প্রতিযোগিতায় আমি এগিয়ে গেলাম। এরপরে আমার শরীরে মেদ বেড়ে গেল, একটু মোটা হলাম। একদা এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা আগে চল, ফলে তারা এগিয়ে গেল। অতঃপর আমাকে বললেন, এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা দেই, প্রতিযোগিতায় তিনি এবার এগিয়ে গেলেন। তিনি হেসে হেসে বললেন, এটা তোমার পূর্বের প্রতিযোগিতার উত্তর (অর্থাৎ তুমি আগে প্রথম হয়েছিলে, এবার আমি প্রথম হলাম, তাই মন খারাপ করোনা)।[7]
ইমাম তিরমিযী তার সুনান কিতাবের অধ্যায়ের শিরোনাম রচনা করেন: ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাত্রিকালীন খোশগল্প গুজব সম্পর্কে যা বর্ণিত।’
কাযী ‘ইয়াদ রহ. বলেন, বর্ণিত আছে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “তোমরা এ অন্তরকে কিছুক্ষন পরপর শান্তনা দাও, কেননা তা লোহার প্রতিধধনির মত আওয়াজ করতে থাকে”।
তিনি আরো বলেন, “মানুষের অন্তরকে যখন তার অপছন্দ কাজ করতে বলা হয় তখন সে অন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ সে আর কাজ করতে পারে না”।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন তোমরা ফিকহের মাসলা মাসায়েল শুনতে শুনতে একটু বিরক্তবোধ করবে তখন তোমরা কবিতা ও আরবদের কিচ্ছা কাহিনী শুনো”।
স্ত্রীকে সদুপদেশ দেওয়া ও বুঝানো:
আপনার পরিবারের কে কি রকম তা আপনি আপনার স্ত্রীকে আগেই জানিয়ে দিন। তাকে সবার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে ধারণা দিলে সে অনুযায়ী তাদের সাথে মিলে মিশে চলতে সহজ হবে। মাঝে মধ্যে আপনি তাকে বিভিন্ন সদুপদেশ দেন, তাকে আপনার বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বুঝান। এতে সে আপনাকে আরো বেশী ভালোবাসবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীদেরকে সদুপদেশ দিতেন। বুখারী ও মুসলিমে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ، فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ، وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلاَهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ، فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ»
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা নারীদের ব্যাপারে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ গ্রহণ করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্য থেকে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাকাই থেকে যাবে। কাজেই নারীদের সাথে কল্যাণ করার উপদেশ গ্রহণ কর।[8]
স্ত্রীর পরিবার ও বান্ধবীদেরকে ভালোবাসা:
স্বামীর পরিবার ও প্রিয়জনকে আদর আপ্যায়ন ও ভালোবাসা যেমন স্ত্রীর দায়িত্ব তেমনিভাবে স্ত্রীর পরিবার ও বন্ধু বান্ধবকে উত্তমরূপে আতিথেয়তা ও আদর যত্ন করাও স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার বান্ধবীর খোঁজ খবর নিতেন ও তার জন্য খাবার পাঠাতেন।
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: مَا غِرْتُ عَلَى نِسَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِلَّا عَلَى خَدِيجَةَ وَإِنِّي لَمْ أُدْرِكْهَا، قَالَتْ: وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا ذَبَحَ الشَّاةَ، فَيَقُولُ: «أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ» قَالَتْ: فَأَغْضَبْتُهُ يَوْمًا، فَقُلْتُ: خَدِيجَةَ فَقَالَ: رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِنِّي قَدْ رُزِقْتُ حُبَّهَا»
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পত্নীদের আর কাউকে ঈর্ষা করি নি, যদিও আমি তাঁকে পাই নি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবেহ করতেন তখন বলতেন, এর গোশত খাদীজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদিন আমি তাঁকে রাগান্বিত করলাম, আর বললাম, খাদীজাকে এতই ভালোবাসেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তার ভালোবাসা আমার অন্তরে গেঁথে দেওয়া হয়েছে”।[9]
সন্তানের প্রতি যত্ন নেয়া:
আপনি তখনই একজন প্রিয় স্বামী হবেন যখন আপনার স্ত্রীকে সন্তানদের লালন পালনের কাজে সহযোগিতা করবেন। আপনি সারা রাত নাক ডেকে ঘুমাবেন আর আপনার স্ত্রী একটু পর পর বাচ্চার ভিজা কাপড় পাল্টাবে, এভাবে হলে আপনার স্ত্রী আপনাকে একজন স্বার্থপর ভাববেন। আপনিও তার কাজে যতটুকু পারেন সহযোগিতা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাদেরকে খুব ভালোবাসতেন।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ" مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَرْحَمُ بِالْعِيَالِ مِنْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে, তিনি বলেন, “পরিবার পরিজনের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত এত দয়াবান কাউকে দেখিনি”। [10]
বুখারি ও মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি নামায শুরু করে লম্বা করতে চাই, তবে শিশুর কান্না শুনে হালকা করে শেষ করি, কারণ আমি মায়ের কষ্টের তীব্রতা জানি”।
বাচ্চাদেরকে আনন্দ দেওয়ার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাদেরকে আদর করতেন এবং ভালো বাসতেন এর আরও প্রমাণ হল,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُؤْتَى بِأَوَّلِ الثَّمَرِ، فَيَقُولُ: «اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا، وَفِي ثِمَارِنَا، وَفِي مُدِّنَا، وَفِي صَاعِنَا بَرَكَةً مَعَ بَرَكَةٍ»، ثُمَّ يُعْطِيهِ أَصْغَرَ مَنْ يَحْضُرُهُ مِنَ الْوِلْدَانِ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মৌসুমের প্রথম ফল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেওয়া হত। তিনি তখন বলতেন, হে আল্লাহ! আমাদের মদীনায় আমাদের ফলে (বা উৎপন্ন ফসলে) আমাদের মুদ্দ-এ ও আমাদের সা‘-এ বরকত দান করুন, বরকতের উপর বরকত দান করুন।” অতপর তিনি ফলটি তাঁর নিকট উপস্থিত সবচেয়ে ছোট শিশুকে দিয়ে দিতেন”। [11]
স্ত্রীকে পর্দায় রাখা:
পর্দা করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা। কেননা তাঁদের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরয করা হয়েছে। তাই একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো স্ত্রীকে পর্দায় রাখা।
আল্লাহ্ তা‘আলা নারীদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়ে বলেন:
﴿وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। [সূরা : আন্-নূর: ৩১]
তিনি আরো বলেন:
﴿ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣ ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে”। [সূরা : আল-আহযাব: ৩৩]
সুতরাং নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে। এতে সে পবিত্রা থাকবে ও সংরক্ষিতা থাকবে, আর তবেই তাকে কষ্ট দেওয়া হবে না, ফাসেক বা খারাপ লোকেরা তাকে উত্যক্ত করতে সুযোগ পাবে না। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নারীর সৌন্দর্য অপরের কাছে প্রকাশ হলেই তাকে কষ্ট, ফিৎনা ও অকল্যাণের সম্মুখীন হতে হয়।
স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিতকতার সর্বোত্তম উদাহরণ:
আপনি যদি আপনার স্ত্রীর জন্য এ হাদীসে বর্ণিত আবু যার‘য় হতে পারেন, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ভালোবাসতেন সেভাবে ভালোবাসতে পারেন তবে আপনিই হবেন আপনার স্ত্রীর উত্তম স্বামী ও ভালোবাসার পাত্র।
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: جَلَسَ إِحْدَى عَشْرَةَ امْرَأَةً، فَتَعَاهَدْنَ وَتَعَاقَدْنَ أَنْ لاَ يَكْتُمْنَ مِنْ أَخْبَارِ أَزْوَاجِهِنَّ شَيْئًا، قَالَتِ الأُولَى: زَوْجِي لَحْمُ جَمَلٍ غَثٍّ، عَلَى رَأْسِ جَبَلٍ: لاَ سَهْلٍ فَيُرْتَقَى وَلاَ سَمِينٍ فَيُنْتَقَلُ، قَالَتِ الثَّانِيَةُ: زَوْجِي لاَ أَبُثُّ خَبَرَهُ، إِنِّي أَخَافُ أَنْ لاَ أَذَرَهُ، إِنْ أَذْكُرْهُ أَذْكُرْ عُجَرَهُ وَبُجَرَهُ، قَالَتِ الثَّالِثَةُ: زَوْجِيَ العَشَنَّقُ، إِنْ أَنْطِقْ أُطَلَّقْ وَإِنْ أَسْكُتْ أُعَلَّقْ، قَالَتِ الرَّابِعَةُ: زَوْجِي كَلَيْلِ تِهَامَةَ، لاَ حَرٌّ وَلاَ قُرٌّ، وَلاَ مَخَافَةَ وَلاَ سَآمَةَ، قَالَتِ الخَامِسَةُ: زَوْجِي إِنْ دَخَلَ فَهِدَ، وَإِنْ خَرَجَ أَسِدَ، وَلاَ يَسْأَلُ عَمَّا عَهِدَ، قَالَتِ السَّادِسَةُ: زَوْجِي إِنْ أَكَلَ لَفَّ، وَإِنْ شَرِبَ اشْتَفَّ، وَإِنِ اضْطَجَعَ التَفَّ، وَلاَ يُولِجُ الكَفَّ لِيَعْلَمَ البَثَّ. قَالَتِ السَّابِعَةُ: زَوْجِي غَيَايَاءُ - أَوْ عَيَايَاءُ - طَبَاقَاءُ، كُلُّ دَاءٍ لَهُ دَاءٌ، شَجَّكِ أَوْ فَلَّكِ أَوْ جَمَعَ كُلًّا لَكِ، قَالَتِ الثَّامِنَةُ: زَوْجِي المَسُّ مَسُّ أَرْنَبٍ، وَالرِّيحُ رِيحُ زَرْنَبٍ، قَالَتِ التَّاسِعَةُ: زَوْجِي رَفِيعُ العِمَادِ، طَوِيلُ النِّجَادِ، عَظِيمُ الرَّمَادِ، قَرِيبُ البَيْتِ مِنَ النَّادِ، قَالَتِ العَاشِرَةُ: زَوْجِي مَالِكٌ وَمَا مَالِكٌ، مَالِكٌ خَيْرٌ مِنْ ذَلِكِ، لَهُ إِبِلٌ كَثِيرَاتُ المَبَارِكِ، قَلِيلاَتُ المَسَارِحِ، وَإِذَا سَمِعْنَ صَوْتَ المِزْهَرِ، أَيْقَنَّ أَنَّهُنَّ هَوَالِكُ، قَالَتِ الحَادِيَةَ عَشْرَةَ: زَوْجِي أَبُو زَرْعٍ، وَمَا أَبُو زَرْعٍ، أَنَاسَ مِنْ حُلِيٍّ أُذُنَيَّ، وَمَلَأَ مِنْ شَحْمٍ عَضُدَيَّ، وَبَجَّحَنِي فَبَجِحَتْ إِلَيَّ نَفْسِي، وَجَدَنِي فِي أَهْلِ غُنَيْمَةٍ بِشِقٍّ، فَجَعَلَنِي فِي أَهْلِ صَهِيلٍ وَأَطِيطٍ، وَدَائِسٍ وَمُنَقٍّ، فَعِنْدَهُ أَقُولُ فَلاَ أُقَبَّحُ، وَأَرْقُدُ فَأَتَصَبَّحُ، وَأَشْرَبُ فَأَتَقَنَّحُ، أُمُّ أَبِي زَرْعٍ، فَمَا أُمُّ أَبِي زَرْعٍ، عُكُومُهَا رَدَاحٌ، وَبَيْتُهَا فَسَاحٌ، ابْنُ أَبِي زَرْعٍ، فَمَا ابْنُ أَبِي زَرْعٍ، مَضْجَعُهُ كَمَسَلِّ شَطْبَةٍ، وَيُشْبِعُهُ ذِرَاعُ الجَفْرَةِ، بِنْتُ أَبِي زَرْعٍ، فَمَا بِنْتُ أَبِي زَرْعٍ، طَوْعُ أَبِيهَا، وَطَوْعُ أُمِّهَا، وَمِلْءُ كِسَائِهَا، وَغَيْظُ جَارَتِهَا، جَارِيَةُ أَبِي زَرْعٍ، فَمَا جَارِيَةُ أَبِي زَرْعٍ، لاَ تَبُثُّ حَدِيثَنَا تَبْثِيثًا، وَلاَ تُنَقِّثُ مِيرَتَنَا تَنْقِيثًا، وَلاَ تَمْلَأُ بَيْتَنَا تَعْشِيشًا، قَالَتْ: خَرَجَ أَبُو زَرْعٍ وَالأَوْطَابُ تُمْخَضُ، فَلَقِيَ امْرَأَةً مَعَهَا وَلَدَانِ لَهَا كَالفَهْدَيْنِ، يَلْعَبَانِ مِنْ تَحْتِ خَصْرِهَا بِرُمَّانَتَيْنِ، فَطَلَّقَنِي وَنَكَحَهَا، فَنَكَحْتُ بَعْدَهُ رَجُلًا سَرِيًّا، رَكِبَ شَرِيًّا، وَأَخَذَ خَطِّيًّا، وَأَرَاحَ عَلَيَّ نَعَمًا ثَرِيًّا، وَأَعْطَانِي مِنْ كُلِّ رَائِحَةٍ زَوْجًا، وَقَالَ: كُلِي أُمَّ زَرْعٍ وَمِيرِي أَهْلَكِ، قَالَتْ: فَلَوْ جَمَعْتُ كُلَّ شَيْءٍ أَعْطَانِيهِ، مَا بَلَغَ أَصْغَرَ آنِيَةِ أَبِي زَرْعٍ، قَالَتْ عَائِشَةُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُنْتُ لَكِ كَأَبِي زَرْعٍ لِأُمِّ زَرْعٍ»
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার (জাহেলী যুগে) এগারজন মহিলা একত্রিত হয়ে এ প্রতিজ্ঞা করল যে, তারা তাদের স্বামীদের কোনো ভাল-মন্দ ও দোষ-ত্রুটির কথা গোপন করবে না। (অর্থাৎ তারা এ সব কথা বৈঠকে আলোচনা করবে)।
প্রথমজন বলল: আমার স্বামী উটের গোস্তের মত কঠোর; পাহাড়ের চুড়ার ন্যায় উঁচু, তার কাছে যাওয়া অনেক কঠিন (অহংকার ও অসদচরিত্রের কারণে), তার স্ত্রীরা ও অন্যান্যরাও তার সাথে মেলামেশায় কোনো লাভবান হয় না।
দ্বিতীয়জন বলল: আমার স্বামীর খবর আমি কাউকে জানাই না; কেননা যদি আমি তার দোষ বর্ণনা করি তবে সে আমাকে তালাক দিয়ে দিবে, ফলে আমি আমার সন্তান সন্তুতি হারাবো। অন্য কথায় বলা যায় যে, যদি আমি তার দোষ ত্রুটি বর্ণনা করতে বসি তবে তার ছোট বড় কোনো দোষই বাদ দিব না। তাই না বলাই ভালো।
তৃতীয়জন বলল: আমার স্বামী একজন নির্বোধ (দুশ্চরিত্র), যদি তার দোষ ত্রুটি বলি তবে সে আমাকে তালাক দিবে, আর যদি আমি চুপ থাকি তবে সে আমাকে তালাক না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতন করবে।
চতুর্থজন বলল: আমার স্বামী গভীর জলের মাছ নয়, অর্থাৎ তিনি মক্কার নিম্নভূমির মত সহজ সরল মানুষ, বেশি গরম ও না আবার বেশী ঠাণ্ডাও না, আবার বেশী পছন্দও না ও বেশী অপছন্দও না। অর্থাৎ মধ্যপন্থী স্বভাবের।
পঞ্চমজন বলল: আমার স্বামী যুদ্ধের ময়দানে শক্তি ও বীরত্বে বাঘের মত, তার দানশীলতা ও অতিথিপরায়ণতায় তিনি ঘরে কি আছে বা নেই সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করে না।
ষষ্ঠজন বলল: আমার স্বামী যদি খায় তবে পরিবারের কারো জন্য আর কিছু বাকি থাকে না, আর পরিবারের কেউ অসুস্থ বা অন্য কারণে কিছু চাইলে তারা পায় না।
সপ্তমজন বলল: আমার স্বামী অক্ষম, পথভোলা, বোকা ও রোগাটে। যদি সে মারে তবে তোমাকে আহত বা শরীরের কোনো অংশ ভেঙ্গে ফেলবে বা দু’টাই করবে।
অষ্টমজন বলল: আমার স্বামীর স্পর্শ খরগোশের স্পর্শের ন্যায় নরম ও তুলতুলে, আর তার সুগন্ধী জারনাব (একপ্রকার সুগন্ধী বৃক্ষ) গাছের মত।
নবমজন বলল: আমার স্বামী সম্ভ্রান্ত পরিবারের, উচ্চভূমির ন্যায় সে গঠনে লম্বা, অধিক দানশীল ও অতিথিপরায়ণ।
দশমজন বলল: আমার স্বামী একজন সম্রাট; তিনি সম্রাটেরও সম্রাট, কেননা তার অনেকগুলো উট আছে যাতে আল্লাহ পাক অনেক বরকত দিয়েছেন, চারণক্ষেত্রে তেমন পাঠাতে হয় না, আর তারা যখনই বীণার আওয়াজ শুনে তখনই বুঝতে পারে যে তাদেরকে যবাই করা হবে, অর্থাৎ তিনি একজন অতিথিপরায়ণ।
একাদশতম বলল: আমার স্বামী আবু যার‘য়। তার কথা আমি কি বলব। সে আমাকে এত বেশী গহনা দিয়েছে যে, আমার কান ভারী হয়ে গেছে, আমার বাজুতে মেদ জমেছে এবং আমি এত সন্তুষ্ট যে, আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। সে আমাকে অত্যন্ত গরির পরিবার থেকে এনেছে, যে পরিবার ছিল শুধু কয়েকটি বকরীর মালিক। সে আমাকে অত্যন্ত ধনী পরিবারে নিয়ে আসে, যেখানে ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি এবং উটের হাওদার আওয়াজ এবং শস্য মাড়াইয়ের খসখসানি শব্দ শোনা যায়। সে আমাকে ধন-সম্পদের মধ্যে রেখেছে। আমি যা কিছু বলতাম সে বিদ্রূপ করত না, আমি নিদ্রা যেতাম এবং সকালে দেরী করে উঠতাম। আমি যখন পানি পান করতাম, তখন তৃপ্তি সহকারে পান করতাম।
আর আবু যার‘য়ের মার কথা কি বলব! তার পাত্র ছিল সর্বদা পরিপূর্ণ এবং তার ঘর ছিল প্রশান্ত। আবু যার‘য়ের পুত্রের কথা কি বলব! সেও খুব ভাল ছিল। তার শয্যা এত সংকীর্ণ ছিল যে, মনে হত যেন কোষবদ্ধ তরবারি অর্থাৎ সে খুব হালকা- পাতলা দেহের অধিকারী ছিল। তার খাদ্য হচ্ছে ছাগলের একখানা পা। আর আবু যার‘য়ের কন্যার কথা বলতে হয় যে, সে কতই না ভালো। সে বাপ-মায়ের খুব বাধ্যগত সন্তান। সে অত্যন্ত সুস্বাস্থ্যের অধিরারিণী, যে কারণে সতীনরা তাকে হিংসা করে। আবু যার‘য়ের ক্রীতদাসীরও অনেক গুণ। সে আমাদের গোপন কথা কখনো ফাঁস করত না, সে আমাদের সম্পদের মিতব্যয়ী ছিল এবং আমাদের বাসস্থানকে আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখত না।
সে মহিলা আরও বলল: একদিন দুধ দোহনের সময়ে আবু যার‘য় বাইরে এমন একজন মহিলাকে দেখতে পেল যে, যার দু’টি পুত্র সন্তান আছে। ওরা মায়ের স্তন্য নিয়ে চিতা বাঘের মত খেলছিল (দুধ পান করছিল)। সে ঐ মহিলাকে দেখে আকৃষ্ট হল এবং আমাকে তালাক দিয়ে তাকে শাদী করল। এরপর আমি এক সম্মানিত ব্যক্তিকে শাদী করলাম। সে দ্রুতগামী অশ্বে অরোহণ করত এবং হাতে বর্শা রাখত। সে আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছে এবং প্রত্যেক প্রকারের গৃহপালিত জন্তু থেকে এক এক জোড়া আমাকে দিয়েছে এবং বলেছে: হে উম্মে যার‘য়! তুমি এ সম্পদ থেকে খাও, পরিধান কর ও উপহার দাও।
মহিলা আরো বলল: সে আমাকে যা কিছু দিয়েছে, তা আবু যার‘য়ের একটি ক্ষুদ্র পাত্রও পূর্ণ করতে পারবে না
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরপর বলেন, “হে আয়েশা! আমি তোমার জন্য উক্ত আবু যার‘য়ের মত হবো”।
হাইসাম ইবনে ‘আদিয়ের বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “হে আয়েশা! আমি তোমার জন্য ভালোবাসা ও ওয়াদাপূরণে উক্ত আবু যার‘য়ের মত হবো, তবে বিচ্ছিন্নতা ও দেশান্তরে তার মত হবো না”।
তাবরানীর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তবে সে (আবু যার‘য়) তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে, আমি তোমাকে কখনও তালাক দিবো না”।
নাসাঈ ও তাবরানীর অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরং আপনি আবু যার‘য়ের চেয়ে অধিক উত্তম”। [12]
স্বামীর জন্য কতিপয় উপদেশ:
স্ত্রীদের সাথে সাদাচরণ করা পুরুষের উপর আবশ্যক। মহান আল্লাহ্ সে দিকে ইঙ্গিত করে বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ وَلَا تَعۡضُلُوهُنَّ لِتَذۡهَبُواْ بِبَعۡضِ مَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ إِلَّآ أَن يَأۡتِينَ بِفَٰحِشَةٖ مُّبَيِّنَةٖۚ وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا ١٩ ﴾ [النساء: ١٩]
“হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিছ হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখো না, তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেওয়ার জন্য, তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন”। [সূরা আন-নিসা: ১৯]
সুতরাং প্রত্যেক পুরুষের উপর অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর অধিকারসমূহ যথাযথভাবে আদায় করা। অবশ্য এই অধিকার প্রদানের পরও নারীদের থেকে কোনো কোনো সময় বক্রতা লক্ষ্য করা যায়। কোনো অবস্থাতেই তাদেরকে পুরাপুরিভাবে বশে আনা সম্ভব নয়। এজন্য পুরুষকে ধৈর্যশীল হতে হবে। তাদেরকে সর্বদা সদুপদেশ প্রদান করতে হবে। তাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ، فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ، وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلاَهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ، فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ»
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা নারীদেরকে উত্তম উপদেশ দিবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থেকে যাবে। কাজেই নারীদের সাথে কল্যাণ করার উপদেশ গ্রহণ কর”।[13]
অন্য বর্ণনায় রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَرِيقَةٍ، فَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَبِهَا عِوَجٌ، وَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا، كَسَرْتَهَا وَكَسْرُهَا طَلَاقُهَا»
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে। তোমার পছন্দমত পথে সে কখনই সোজা হয়ে চলবে না। তুমি যদি তার থেকে উপকৃত হতে চাও তো এই বক্র অবস্থাতেই উপকৃত হও। কিন্তু এই বক্রতা সোজা করতে গেলে তাকে ভেঙ্গে দিবে। আর ভেঙ্গে দেওয়া মানেই তাকে তালাক প্রদান করা”।[14]
নারীদের মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বক্রতা থাকলেই যে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে এমন নয়; বরং তার মধ্যে অনেক ভাল গুণও আছে। কোন বিষয় হয়তো আপনি অপছন্দ করছেন কিন্তু তাতেই রয়েছে আপনার জন্য প্রভূত কল্যাণ যা আপনি জানেনই না। এজন্যই আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا ١٩ ﴾ [النساء: ١٩]
“আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন”। [সূরা আন-নিসা: ১৯]
অতঃএব, স্ত্রীর নিকট থেকে কোনো বিরোধিতা বা অপছন্দনীয় বিষয় প্রকাশ পেলে দ্রুত তাকে উপদেশ দিবে নসীহত করবে। আল্লাহর কথা স্মরণ করাবে, তাঁর শাস্তির ভয় দেখাবে। তার আবধ্যতা ও গোঁড়ামীর পরিণতি যে ভয়াবহ সে সম্পর্কে সতর্ক করবে। কিন্তু এরপরও যদি স্ত্রীর মধ্যে অবাধ্যতা, হঠকারিতা ও অসৎ চরিত্র লক্ষ্য করা যায়, তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও সীমারেখা রয়েছে যা লঙ্ঘন করা থেকে সাবধান থাকতে হবে। কুরআনুল কারীম এবং সুন্নাতে নববীতে এর একটি সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ বলেন,
﴿ ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا ٣٤ ﴾ [النساء: ٣٤]
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেন। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান”। [সূরা আন-নিসা: ৩৪]
এই আয়াতে অবাধ্য স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য যে নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:
প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে: উপদেশ দেওয়া: এ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, তাকে ভদ্র ও নম্রভাবে বুঝাতে হবে, বিরোধীতা ও হঠকারিতার পরিণাম সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে। স্বামী যে সত্য সত্যই স্ত্রীর কল্যাণকামী এ বিষয়টি যেন তার কাছে প্রকাশ পায় এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে। রাগতঃ ভাষায় কর্কষ কন্ঠের কথা কখনো উপদেশ হতে পারে না। স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য কখনই কঠিন ও শক্ত ভাষা ব্যবহার করে উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে প্রতিহত করা যায় না।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: বিছানায় পরিত্যাগ করাঃ একই বিছানায় তার থেকে আলাদাভাবে শয়ন করা। এমন কথা নয় যে, তাকে ঘরের বাইরে রাখা বা অন্য ঘরে রাখা বা পিতা-মাতার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতে নির্দেশিত বিছানায় পরিত্যাগ করার ব্যাখ্যায় বলেছেন,
عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟، قَالَ: «أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ»
হাকীম ইবন মু‘আবিয়া রহ. তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! স্বামীদের উপর স্ত্রীদের কী হক? তিনি বলেন, “যা সে খাবে তাকেও (স্ত্রী) খাওয়াবে, আর সে যা পরিধান করবে তাকেও তা পরিধান করাবে। আর তার (স্ত্রীর) চেহারার উপর মারবে না এবং তাকে গালাগাল করবে না। আর তাকে ঘর হতে বের করে দিবে না”। [15]
‘বিছানায় আলাদা করে রাখা’র অর্থ সম্পর্কে আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তার সাথে তার বিছানাতেই শুইবে কিন্তু তার সাথে সহবাস করবে না। তার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে শয়ন করবে। অন্য বর্ণনা মতে ইবনু আব্বাস বলেন, ‘তার সাথে স্বাভাবিক কথা ছাড়া আর কিছু বলবে না।’[16]
ইমাম কুরতুবী এই পদক্ষেপের উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, স্বামীর প্রতি যদি স্ত্রীর ভালোবাসা থাকে তাহলে এ অবস্থা তার কাছে খুবই অসহনীয় ও কষ্টকর হবে, ফলে সে সংশোধন হবে। কিন্তু ভালোবাসায় ত্রুটি থাকলে বা মনে ঘৃণা থাকলে নিজ অবাধ্যতার উপর সে অটল থাকবে- সংশোধনের পথে অগ্রসর হবে না।’ [17]
সংশোধনের এই দ্বিতীয় নীতি ফলপ্রসু না হলে তৃতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর তা হচ্ছে:
তৃতীয় পদক্ষেপ: প্রহার করাঃ এটি হচ্ছে সর্বশেষ পদক্ষেপ। আল্লাহ্ বলেন, وَاضْرِبُوهُنَّ ‘এবং তাদেরকে প্রহার করবে।’ এর তাফসীরে হাফেয ইবন কাসীর রহ. বলেন, ‘যদি উপদেশ প্রদান ও আলাদা রাখার পরও কোনো কাজ না হয়, স্ত্রীগণ সংশোধনের পথে ফিরে না আসে, তবে হালকা করে তাদেরকে প্রহার করবে।
জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فَاتَّقُوا اللهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ، وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ، فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ»
“তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। কেননা আল্লাহর আমানতে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ। আল্লাহর বাণী সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করা বৈধ করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা তোমাদের গৃহে এমন লোককে প্রবেশ করতে দিবে না যাকে তোমরা পছন্দ কর না। কিন্তু তারা যদি নির্দেশ লঙ্ঘন করে এরূপ করে ফেলে তবে, তাদেরকে প্রহার কর। কিন্তু প্রহার যেন কঠিন ও কষ্টদায়ক না হয়। তোমাদের উপর তাদের অধিকার হচ্ছে, তোমরা সঠিকভাবে নিয়ম মাফিক তাদের খানা-পিনা ও কাপড়ের ব্যবস্থা করবে।”[18]
হাসান বাসরী রহ. এই প্রহারের ব্যাখ্যায় বলেন, প্রহার যেন এমন না হয় যার কারণে শরীরে কোন চিহ্ন দেখা যায় বা শরীর ফুলে-ফুটে যায়। ‘আত্বা রহ. বলেন, ইবন আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, উক্ত প্রহার কিরূপ হবে? তিনি বললেন, ‘মেসওয়াক বা অনুরূপ বস্তু দ্বারা প্রহার হতে হবে। (তাফসীরে কুরতুবী)।
অন্য হাদীসে প্রহারের ক্ষেত্রে হালকাভাবে হলেও মুখমন্ডলে প্রহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
পরিশেষে বলব, একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিতি করতে চাইলে পারিবারিক জীবনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শই আপনার আদর্শ হতে হবে। আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত স্ত্রীকে ভালোবাসলেই আপনার স্ত্রী নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করবেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত একজন আদর্শ স্বামী হিসেবে কবুল করুন। আমীন।
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার
আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ আর তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ।” (সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৮৭।)
স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের পোশাকের মতো। পোশাক যেমন আমাদের ইজ্জত-আব্রু হেফাজত করে ও আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকাও তেমনি। আমাদের কারো পোশাক যদি কখনো ময়লা হয়ে সেটা যেমন আমরা একেবারে ফেলে না দিয়ে যত্ন করে পরিষ্কার করি, ঠিক তেমনি স্বামী বা স্ত্রীর কারো কোন ত্রুটি থাকলে সেই কারনে তার পুরোটাই খারাপ, তার সাথে আর ভালো ব্যবহার করা যাবে না, এমন না। বরং, স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজন সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হবে, একজন আরেকজনকে নেকীর কাজে সাহায্য করবে – তাহলেই সম্ভব একটা সুখী পরিবার গড়ে তোলা।
► স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করা – এটা যেমন সুখী পরিবার গঠনের অপরিহার্য শর্ত, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, এটা একটা সৃষ্টিকর্তার আদেশ – যা মানতে আমরা সকলেই বাধ্য!
• “তোমরা নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর, যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রেখেছেন।” (সুরা আন-নিসাঃ ১৯।)
• “পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু, নারীরদের ওপর পুরুষদের কর্তৃত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।” (সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২২৮।)
পুরুষদের মাঝে অনেকেই আছে – নামায রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের ব্যপারে তারা অগ্রগামী, বাইরের লোকদের সাথে খুব সাধু, মানুষের মাঝে নিজদের সুনাম ধরে রাখার জন্য, নিজের নাম ভালো রাখার জন্য সদা ততপর – কিন্তু ঘরে আসলে তাদের মুখোশ খুলে ‘আসল চেহারা’ বেরিয়ে আসে! পুরুষদের অনেকেই নিজ ঘরের মানুষদের সাথেই ভালো আচরণ করেনা, তাদের হক্ক ঠিকমতো আদায় করেনা – যদিও বাইরের মানুষেরা তাকে ভালো, সদাচরণকারী ও পরোপকারী বলেই জানে। আশচর্যের ব্যপার হচ্ছে, বাইরের মানুষের কাছে যেই লোকটি সবচেয়ে ভালো, তার নিজের স্ত্রীর কাছে সেই লোকটি সবচাইতে খারাপ। বিবাহিত ভাইদের অনেকে নিজদের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথেও ভালো আচরণ করেন না, অনেকে নিজদের স্ত্রীদেরকে মানুষই মনে করেন না, তাদের একটু ভুল-ত্রুটি দেখতে পেলেই বাঘের মতো চার্জ করে বসেন। নিঃসন্দেহে এইটা মারাত্বক রকমের ভুল ও চরিত্রের সাংঘাতিক ত্রুটি যা একজন অনেক ইবাদতকারী বান্দাকেও খুব সহজেই জাহান্নামের অতল গহবরে প্রবেশ করিয়ে দেবে – আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।
• আপনি যদি আল্লাহকে ভয় করেন, জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে বাচতে চান, তাহলে জেনে রাখুনঃ
স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করে, তাদের হক্ক নষ্ট করে, তাদের সাথে অন্যায় ও জুলুম অত্যাচার করে আপনি জাহান্নামে যাবেন। স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ ও জুলুম করার কারণে কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে খারাপ বলে মনে করে, তাহলে আপনি যতই ইবাদত করে থাকেন না কেনো, আল্লাহর কাছেও আপনি খারাপ বলে গণ্য হবেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” (তিরমিযীঃ ১১৬২; হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ ছহীহাহঃ ২৮৪।)
অন্য হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“স্বামীকে খুশী রেখে যে স্ত্রীলোক মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতে যাবে।” (ইবনে মাযাহ, তিরমিযী ও হাকেম।)
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, জান্নাতী হওয়ার জন্য স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্য উভয়ের ভালো হওয়ার সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন আছে!
স্ত্রীদের প্রতি দয়া ও কোমলতা প্রদর্শন করা এবং হিংস্রতা থেকে দূরে থাকা
দুনিয়ার কোন মানুষই ভুল-ত্রুটির উর্ধে নয়। আপনার স্ত্রীও একজন মানুষ, তারা কোন রোবট নয় সুতরাং আপনি যেমন ভুল করতে পারেন, আপনার স্ত্রীও ভুল করতে পারে। আপনি নিজে চিন্তা করুন, আপনি দিনে-রাতে উঠতে বসতে কত ভুল করছেন কিন্তু আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করছেন ও সুযোগ দিচ্ছেন – তাহলে আপনি কেনো অন্য আরেকজনের সূক্ষ্ম ভুলকে পাহাড় সমান বানাচ্ছেন? স্ত্রীদের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করতে শিখুন, তাদেরকে উত্তম ভাষায় উপদেশ দিন, নিজে ভালো হয়ে তার সামনে সুন্দর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরুন। এতে করে যেমন আপনি নিজে মানসিকভাবে শান্তি পাবেন, স্ত্রী আপনার কটু কথার অত্যাচার থেকে রেহাই পাবে – এবং এইরকম ভালো আচরণ ও কোমলতার অভ্যাসের বিনিময়ে আশা করা যায় আপনার স্ত্রীর কোন ভুল থাকলে সে সংশোধন করতে আগ্রহী হবে।
পক্ষান্তরে আপনি যদি কোমলতা না দেখান, সামান্য ব্যপার নিয়ে স্ত্রীর সাথে বাধাবাধি করেন তাহলে জেনে রাখুন – এতে হিতে বিপরীত হবে। বেশি সমালোচনা দুনিয়ার সবচাইতে ভালো মানুষটাকেও খারাপ বানিয়ে দেয়, এতে তার মাঝে খারাপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়, ফলে সে নিজের ভুল সংশোধন না করে উলটো বেকে বসে। এইজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদেরকে খুব বেশি নসীহত করেছেন তাঁর উম্মতদেরকে, তারা যাতে করে তাদের স্ত্রীদের জন্য কল্যানকামী হয়, তাদের সাথে ভালো আচরণ করে।
আ’মর ইবনুল আহ্ওয়াস থেকে বর্ণিত। তিনি বিদায় হাজ্জে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করেন এবং ওয়াজ-নসীহত করেন। এরপর তিনি বলেনঃ
“তোমরা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ শুনে নাও। কেননা তারা তোমাদের নিকট আবদ্ধ আছে। এর অধিক তাদের উপর তোমাদের কর্তৃত্ব নাই যে, তারা যদি প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়, সত্যিই যদি তারা তাই (প্রকাশ্য অশ্লীলতা) করে, তবে তোমরা তাদেরকে পৃথক বিছানায় রাখবে এবং আহত হয় না এরূপ হাল্কা মারধর করবে। অতঃপর তারা তোমাদের অনুগত হয়ে গেলে তাদের উপর আর বাড়াবাড়ি করো না। স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তোমাদের উপরও তাদের অধিকার আছে। তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার এই যে, তারা তোমাদের শয্যা তোমাদের অপছন্দনীয় লোকদের দ্বারা মাড়াবে না এবং তোমাদের অপছন্দনীয় লোকেদেরকে তোমাদের ঘরে প্রবেশানুমতি দিবে না। সাবধান! তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তাদের ভরণপোষণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সজ্জার ব্যাপারে তোমরা তাদের প্রতি শোভনীয় আচরণ করবে।” (সুনানু ইবনে মাজাহ্, নিকাহ বা বিবাহ অধ্যায়ঃ ১৮৫১, তিরমিযী ১১৬৩, হাদীসটি হাসান সহীহ, ইরওয়াহ ১৯৯৭-২০২০।)
আপনি নিজে আল্লাহকে মানেন না, আপনার চরিত্র যদি ফেরাউনের মতো হয় তাহলে আপনি কি করে আশা করেন আপনার স্ত্রী আসিয়ার (আঃ) এর মতো উত্তম হবে? আপনি মুহা’ম্মাদ সাঃ এর আদর্শকে অনুসরণ করুন – তাহলে আপনি আশা করতে পারেন আপনার স্ত্রী খাদিজাহ (রাঃ), আয়িশাহ (রাঃ) এর মতো হবে।
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কোনদিন নিজের স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলেনি নি, তাদেরকে গালি দেন নি – অন্যায়ভাবে কটু কথা বলে তাদেরকে কষ্ট দেন নি। বরং, তিনি কোমলতা প্রদর্শনের জন্য কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন।
হাদীসগুলো দেখুনঃ
• আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “আমার কাছ থেকে মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করার শিক্ষা গ্রহণ কর। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টা সর্বাপেক্ষা বাঁকা। অতএব তুমি যদি সোজা করতে যাও, তবে ভেঙ্গে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি ফেলে রাখ তবে বাঁকা হতেই থাকবে। অতএব, নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর।” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীনঃ ২৭৩।)
• আয়েশা (রাযিঃ) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ দয়ালু, তিনি কোমলতাকে পছন্দ করেন। তিনি কোমলতার বিপরীতে দেন যা তিনি সহিংসতার বিপরীতে দেন না, কোমলতা ব্যতীত অন্য কিছুর বিপরীতে দেন না।” (সহীহ মুসলিম।)
• আয়েশা (রাযি:) থেকে আরেকটি হাদিসে এসেছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ কোমলতাপূর্ণ, তিনি সকল বিষয়ে কোমলতাকে পছন্দ করেন।” (বুখারি ও মুসলিম।)
• জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযি:) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “যাকে কোমলতা থেকে বঞ্চিত করা হল তাকে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত করা হল।” (সহীহ মুসলিম।)
• ইমাম আহমদ আয়েশা (রাযি:) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাকে খেতাব করে বলেছেন, হে আয়েশা! তুমি কোমলতা অবলম্বন করো; কেননা আল্লাহ তাআলা যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান তখন তাদেরকে কোমলতার পথ দেখান, অন্য এক বর্ণনা মতে- আল্লাহ যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান, তিনি তাদের মধ্যে কোমলতার প্রবেশ ঘটান।” (মুসনাদে আহমদ।)
দুনিয়াবাসীর মাঝে আপনার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনই আপনার কোমলতা পাওয়ার সবচেয়ে বেশি দাবীদার।
সর্বশেষ, আপনি যদি আপনার ঘরের নারীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন – আপনার পরকাল নষ্ট হবে, সাথে সাথে আপনি দুনিয়ার জীবনে থার্ডক্লাস নিম্নশ্রেণীর পুরুষ হিসেবেই গণ্য হবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে। আর যারা অসম্মানিত, নারীদের প্রতি তাদের আচরণও হয় অসম্মানজনক।” সুনানে আত-তিরমিযী।
সংক্ষেপে বিয়ের রুকন, শর্ত ও ওলি বা অভিভাবক এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তসমূহ
সংক্ষেপে বিয়ের রুকন, শর্ত ও ওলি বা অভিভাবক এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তসমূহ
প্রশ্ন: বিয়ের রুকন ও শর্ত কি কি?
উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য।
• ইসলামে বিয়ের রুকন বা খুঁটি তিনটি:
এক:
বিয়ে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সমূহ প্রতিবন্ধকতা হতে বর-কনে উভয়ে মুক্ত হওয়া: যেমন- বর-কনে পরস্পর মোহরেম হওয়া; ঔরশগত কারণে হোক অথবা দুগ্ধপানের কারণে হোক। বর কাফের কিন্তু কনে মুসলিম হওয়া, ইত্যাদি।
দুই:
ইজাব বা প্রস্তাবনা: এটি মেয়ের অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে পেশকৃত প্রস্তাবনামূলক বাক্য। যেমন- বরকে লক্ষ্য করে বলা যেতে পারে “আমি অমুককে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম” অথবা এ ধরনের অন্য কোন কথা।
তিন:
কবুল বা গ্রহণ: এটি বর বা বরের প্রতিনিধির পক্ষ থেকে সম্মতিসূচক বাক্য। যেমন- বর বলতে পারেন “আমি গ্রহণ করলাম” অথবা এ ধরনের অন্য কোন কথা।
• বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্তগুলো নিম্নরূপ:
(১) ইশারা করে দেখিয়ে দেয়া কিংবা নামোল্লেখ করে সনাক্ত করা অথবা গুণাবলী উল্লেখ অথবা অন্য কোন মাধ্যমে বর-কনে উভয়কে সুনির্দিষ্ট করে নেয়া।
(২) বর-কনে প্রত্যেকে একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া।
এর দলীল হচ্ছে-নবী (সাঃ) বাণী
“স্বামীহারা নারী (বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্তা) কে তার সিদ্ধান্ত জানা ছাড়া (অর্থাৎ সিদ্ধান্ত তার কাছ থেকে চাওয়া হবে এবং তাকে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে) বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়া (কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে) বিয়ে দেয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল,ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব (যেহেতু সে লজ্জা করবে)। তিনি বললেন,চুপ করে থাকাটাই তার সম্মতি।”[সহীহ বুখারী, (৪৭৪১)]
(৩) বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হবে।
যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশনা জারী করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও।”[সূরা নুর, ২৪:৩২]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।”[হাদিসটি তিরমিযি (১০২১) ও অন্যান্য গ্রন্থকার কর্তৃক সংকলিত এবং হাদিসটি সহীহ]
(৪) বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে।
দলীল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই।” [তাবারানী কর্তৃক সংকলিত, সহীহ জামে (৭৫৫৮)]।
বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে। দলীল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী-
“তোমরা বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা কর।”[মুসনাদে আহমাদ এবং সহীহ জামে গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলা হয়েছে (১০৭২)]
• বিয়ের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্তঃ
১. সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হওয়া।
২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।
৩. দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত হওয়া।
৪. অভিভাবককে কনের ধর্মের অনুসারী হওয়া।
সুতরাং কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না। অনুরূপভাবে কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না। তবে অমুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম নারীর অভিভাবক হতে পারবে, যদিও তাদের উভয়ের ধর্ম ভিন্ন হোক না কেন। কিন্তু মুরতাদ ব্যক্তি কারো অভিভাবক হতে পারবে না।
৫. আদেল বা ন্যায়বান হওয়া।
অর্থাৎ ফাসেক না হওয়া। কিছু কিছু আলেম এ শর্তটি আরোপ করেছেন। অন্যেরা বাহ্যিক আদালতকে (দ্বীনদারিকে) যথেষ্ট ধরেছেন। আবার কারো কারো মতে, যাকে তিনি বিয়ে দিচ্ছেন তার কল্যাণ বিবেচনা করার মত যোগ্যতা থাকলে চলবে।
৬. পুরুষ হওয়া।
দলীল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী-
“এক মহিলা আরেক মহিলাকে বিয়ে দিতে পারবে না। অথবা মহিলা নিজে নিজেকে বিয়ে দিতে পারবে না। ব্যভিচারিনী নিজে নিজেকে বিয়ে দেয়।”[ইবনে মাজাহ (১৭৮২) ও সহীহ জামে (৭২৯৮)।
৭. বুদ্ধিমত্তার পরিপক্কতা থাকা।
এটি হচ্ছে বিয়ের ক্ষেত্রে সমতা (কুফু) ও অন্যান্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করতে পারার যোগ্যতা।
ইসলামী আইনবিদগণ অভিভাবকদের একটি ক্রমধারা নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং নিকটবর্তী অভিভাবক থাকতে দূরবর্তী অভিভাবকের অভিভাবকত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। নিকটবর্তী অভিভাবক না থাকলে অথবা তার মধ্যে শর্তের ঘাটতি থাকলে দূরবর্তী অভিভাবক গ্রহণযোগ্য হবে। নারীর অভিভাবক হচ্ছে- তাঁর পিতা। এরপর পিতা যাকে দায়িত্ব দিয়ে যান সে ব্যক্তি। এরপর পিতামহ, যতই উর্দ্ধগামী হোক। এরপর তাঁর সন্তান। এরপর তাঁর সন্তানের সন্তানেরা, যতই অধস্তন হোক। এরপর তাঁর সহোদর ভাই। এরপর তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই। এরপর এ দুইশ্রেণীর ভাইয়ের সন্তানেরা। এরপর তাঁর সহোদর শ্রেণীর চাচা। এরপর বৈমাত্রেয় শ্রেণীর চাচা। এরপর এ দুইশ্রেণীর চাচার সন্তানেরা। এরপর মীরাছের ক্ষেত্রে যারা ‘আসাবা’ হয় সে শ্রেণীর আত্মীয়গণ। এরপর নিকটাত্মীয় থেকে ক্রমান্বয়ে দূরের আত্মীয়। যার কোন অভিভাবক নেই মুসলিম শাসক অথবা শাসকের প্রতিনিধি (যেমন বিচারক) তার অভিভাবক।
বিবাহের কতিপয় সুন্নাত সমূহ
বিবাহের কতিপয় সুন্নাত সমূহ
যে সকল ভাইয়েরা/বোনেরা বিবাহ উপযুক্ত বা যাহারা বিবাহ নিয়ে ভাবছেন তাদের অথবা যারা অভিবাবক আছেন তারা জেনে নিন:
বিবাহের কতিপয় সুন্নত সমূহঃ
(১) মাসনূন বিবাহ সাদা সিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবেনা। (তাবারানী আউসাত, হাদিস নং- ৩৬১২)
(২) সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিবাহের পূর্বে পয়গাম পাঠানো। কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত তা সুন্নতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য। (বুখারী হাদিস নং-৫০৯০, ইমদাদুল ফাতাওয়া-৪: ২০০)
(৪) বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা। (বুখারী/৫১৪৭)
(৫) সামর্থানুযায়ী মোহর ধার্য করা। (আবু দাউদ/২১০৬)
(৬) বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দোয়া পড়াঃ
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা খয়রাহা ওয়া খয়রা মা জাবালতুহা আলাইহি ওয়াওযুবিকা মিন শার্রিহা মিন শার্রিমা জাবালতাহা আলাইহি” (আবু দাউদ/২১৬০)
(৭) স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তার পর যখনই সহবাস এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিম্নোক্ত দু’আ পড়ে নিবেঃ
“বিসমিল্লাহ্। আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা।” (মুসলিম/১৪৩৪)
(উপরোক্ত দোয়া না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। অতঃপর সন্তান বড় হলে, তার মধ্যে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে থাকে এবং বাচ্চা নাফরমান ও অবাধ্য হয়। সুতরাং পিতা মাতাকে খুবই শতর্ক থাকা জরুরী)
(৮) বাসর রাতের পর স্বীয় আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাংখী এবং গরীব মিসকীনদের তাউফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা (মুসলিম/১৪২৭)
(৯) কোন পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া হারাম (আহসানুল ফাতাওয়া ৫/১৩)
(১০) কনের ইযন এর জন্য স্বাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই। সুতরাং ছেলের পক্ষের লোক ইযন শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ। মেয়ের কোন মাহরুম বিবাহের এবং উকীল হওয়ার অনুমতি নিবে। (মুসলিম/১৪২১)
(১১) শর্ত আরোপ করে বর যাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যাক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ন রুপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমাদ/২০৭২২, বুখারী/২৬৯৭)
(১২) ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরীব গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয়না, সে ওলীমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ওলীমা আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত (আবু দাউদ /৩৭৫৪)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্নত মোতাবেক বিবাহ করার তৌফিক দান করুন। আমীন
বিয়ের অপর নাম প্রশান্তি, উচ্ছ্বাস আর দয়া
কিশোর বয়স থেকে বিয়ের ব্যাপারে আমার একটা প্রশ্ন ছিলো মনে, সেই প্রশ্নটা যাদের করেছিলাম, তাদের উত্তর কিছু খুবই নিম্নমানের। তাই আদতে আমার কৌতুহল নিবৃত্ত হয়নি। প্রশ্নটি ছিলো, দু’জন মোটামুটি অপরিচিত মানুষ কীভাবে সারাটা জীবন একসাথে কাটিয়ে দিতে পারে? মোটামুটি অপরিচিত বললাম এই কারণে যে, বিয়ের আগে থেকে আসলে তেমন একটা জানাজানি একদমই সম্ভব না। একসাথে থাকতে গেলে তখন টের পাওয়া যায় যে অনেকে অনেক ছোট-ছোট বিষয়েই বিরক্ত হয়। আর তার উপরে যখন একটা বয়স পরে অনেকের শরীরে রোগবালাই ভর করে, তখন তো অপরজন অপার ভালোবাসায় আর যত্নে তার দেখাশোনা করেন — এমনটাই বা কী করে সম্ভব?
অবশেষে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম। তাও পেয়েছি পবিত্র কুরআনুল কারীমের আয়াত থেকে। নুমান আলী খানের আলোচনা থেকে শেখা সেই আয়াতটির ব্যাখ্যা এখানে উল্লেখ করছি –
আল্লাহ বলছেনঃ
“আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে”। [সূরা আর-রুমঃ ২১]
এই আয়াতটিতে আল্লাহ্ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অতুলনীয়, সংক্ষিপ্ত এবং সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়ে এই সম্পর্ককে তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) একটি নিদর্শন (আয়াত) বলে উল্লেখ করেছেন। আসুন এই পবিত্র সম্পর্ক সম্বন্ধে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কি বলেছেন সেটা জানি। সম্পর্কটির বিভিন্ন পর্যায় তিনি তিনটি শব্দের দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।
“..যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে (আরবি শব্দটি হচ্ছে – তাসকুনু) থাক…”
১) এই ‘তাসকুনু’ শব্দটির মূল হচ্ছে সুকুন । সুকুন = প্রশান্তি।
যে কেউ ই তার ভালবাসার ব্যক্তির সাথে থাকার সময় প্রশান্তির এই অনুভূতি তীব্রভাবে অনুভব করে । আনন্দ, সন্তুষ্টি আর প্রশান্তির এই অনুভূতি স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি ভালবাসাকে আরো তীব্র ও গাঢ় করে তোলে। আর এই সুকুন এগিয়ে নিয়ে যায় সম্পর্কের দ্বিতীয় ধাপের দিকে।
সম্পর্কের প্রথম পর্যায়টি সুকুনের মাধ্যমে তুলে ধরার পর দ্বিতীয় পর্যায়টি বর্ণনা করেন এইভাবে:
“… তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন পারস্পরিক সম্প্রীতি (মাওয়াদ্দাহ)…”
২) মাওয়াদ্দাহ= গভীর আবেগের উচ্ছ্বাস মিশ্রিত ভালবাসা / কারো জন্য বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র আকর্ষণ
অর্থাৎ, স্বামী বা স্ত্রী –
অপরজনের সাথে থাকার সময় প্রশান্তি অনুভব করে
তার প্রতি আবেগের উচ্ছ্বাস অনুভব করে
এভাবে স্বামী স্ত্রীর এই যাত্রা যতই এগিয়ে যেতে থাকে আবেগের উচ্ছ্বাস ক্রমশ কমতে থাকে। দুজনেই আরো পরিণত হয় এবং তাদের কল্পনার স্বপ্নগুলো ফিকে হতে শুরু করে। এই পথচলায় অনিবার্যভাবেই কিছু বাধা-বিপত্তি আসে। প্রথম দিকে উভয়েই আবেগে অন্ধ থাকলে ও ধীরে ধীরে একে অপরের দোষ-ত্রুটিগুলো খুঁজে পেতে শুরু করে।
আল্লাহ্ আয়াতটিতে এরপরে বলেছেনঃ
“… এবং তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন দয়া (রাহমা)…”
৩) রাহমা = দয়া/ মমতা/ কোমল স্নেহময় ভালবাসা।
এখন সময়ের সাথে সাথে আবেগের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়তে শুরু করেছে এটা-সেটা নিয়ে খুনসুটি আর ঝগড়ার কারণে আগের সেই অখন্ড প্রশান্তি ও হয়ত সবসময় থাকেনা তাই আল্লাহ্ বললেন যে তিনি উভয়ের হৃদয়ে দিয়েছেন একে অপরের জন্য ‘রাহমা’ । যাতে করে মান-অভিমানে জড়িয়ে পড়লেও তারা যেন একে অপরকে গভীর মমতায় ক্ষমা করে দিতে পারে। এই ‘রাহমা’ ই সম্পর্কে এগিয়ে নিয়ে যায় কারণ যত কিছুই হোক না কেন বুকের গভীরে আমরা কখনোই চাইনা আমাদের ভালবাসার মানুষটা কষ্ট পাক।
আয়াতটির শেষে আল্লাহ বলেছেনঃ
“… নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে”
সুবহানাল্লাহ !!
সুন্দর এই নিদর্শন নিয়ে আপনি চিন্তা করেছেন কি? এই অসাধারণ বাণী জানার পরে কোন মুসলিম-মুসলিমাহর উচিত নয় ‘কেয়ারিং আর শেয়ারিং’ এর নামে হারাম সম্পর্ক করতে যাওয়া বরং আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল করে বিয়েটা করেই ফেলা।
বিয়ে করার ব্যাপারে সবকিছুই প্রতিকূল খুঁজে পাচ্ছেন? এখন উপায়?
আল্লাহর নির্দেশ মানার নিয়াত করে হাত দু’খানি তুলে দুআ করে সাহায্য চাইতে পারেন। কোন কঠিন কিছুকে সহজ করে দেয়ার মালিক আল্লাহ। কিন্তু নিয়াত করার এবং দুআ করার কাজটা আমাদেরকেই করতে হবে।
কোন হারাম সম্পর্ক নয়, কোন হারাম দৃষ্টি নয়, হারাম কোন যোগাযোগ নয় ইনশাআল্লাহ। বরং চলমান সমাজের এইসব কলুষতাকে এড়িয়ে পবিত্র সম্পর্কটিতে দু’জনার সম্পর্কের প্রতিটি মূহুর্ত যেন ইবাদাত হয় সেই ইচ্ছা পোষণ করে দুআ করা দরকার। আল্লাহর দেওয়া সুকুন, মাওয়াদ্দাহ আর রাহমাহ অর্জনের অভিপ্রায় বুকে নিয়ে ক্রমাগত চাইতে থাকা উচিত। চাওয়ার আবেগ আর তীব্রতা বেশি থাকলে কেঁদে কেঁদে জায়নামাজ ভিজিয়ে ফেলে চাইতে হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত দু’আ শুনেন। আল্লাহ অবশ্যই সবকিছু সুন্দর, শান্তিময় আর সহজ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ, যদি তাঁর কাছে আমাদের চাওয়া হয় সুন্দর।
নিশ্চয়ই আল্লাহ এই বিশ্বজগতের প্রতিপালক, যিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী, যিনি হও বললেই হয়ে যায়, যিনি অসীম করুণাময়, পরম দয়ালু, যিনি আমাদের সমস্ত দুআ শোনেন। আমাদের রব আল্লাহর কাছে ছাড়া আমরা আর কার আছে যাবো? দু’হাত রিক্ত-শূণ্য আমরা চেয়ে চেয়েই একদিন সম্পদে পূর্ণ হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেনঃ
“…যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে… ” [সূরা বাকারাহ : ১৮৬]
প্রসবোত্তর স্রাব অথবা ঋতুস্রাব থাকাকালীন সময়ে স্বামী নিজের কাম বাসনা চরিতার্থ করতে কি করতে পারে?
প্রসবোত্তর স্রাব অথবা ঋতুস্রাব থাকাকালীন সময়ে স্বামী নিজের কাম বাসনা চরিতার্থ করতে কি করতে পারে?
প্রশ্নঃ প্রসবোত্তর স্রাব অথবা ঋতুস্রাব থাকাকালীন সময়ে মিলন হারাম। কিন্তু সেই অবস্থায় স্বামী নিজের কাম বাসনা চরিতার্থ করতে কি করতে পারে?
উত্তরঃ
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“লোকেরা তোমাকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা অশূচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রব কালে স্ত্রী সঙ্গ বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য)তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারাহঃ ২২২)
কিন্তু নিকটবর্তী হয়ো না’র অর্থ হল সঙ্গমের জন্য তাঁদের কাছে যেও না। অর্থাৎ যোনিপথে সঙ্গম হারাম। পায়খানারদ্বারেও সঙ্গম হারাম।
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বলেন,
“আল্লাহ আযযা অজাল্ল (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষের মলদ্বারে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে।” (তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, সহিহুল জামে ৭৮০১ নং)
তিনি আরও বলেন,
“যে ব্যক্তি কোন ঋতুমতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাস করে, অথবা কোন গনকের কাছে উপস্থিত হয়ে (সে যা বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী করে।” (অর্থাৎ কুরআনকেই সে অবিশ্বাস অ অমান্য করে। কারণ, কুরআনে এক সব কুকর্মকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।) (আহমাদ ২/৪০৮, ৪৭৬, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ৫২২ নং)
তাহলে যৌন ক্ষুধা মিটাতে এ সময় করা যায় কি?
এর উত্তর দিয়েছেন মহানবী (সঃ)। তিনি বলেছেন,
“সঙ্গম ছাড়া সব কিছু কর।” (মুসলিম ৩০২ নং)
তা বলে কি মুখ-মৈথুন করা যাবে?
না, কারণ যে মুখে আল্লাহ্র যিকির হয়, সে মুখকে এমন কাজে ব্যবহার রুচিবিরুদ্ধ কাজ। অবশ্য উরু-মৈথুন করা যায়। তবে সতর্কতার সাথে, যাতে প্রস্রাব বা পায়খানারদ্বারে সঙ্গম হয়ে বসে। যদিও মা আয়েশা (রঃ) বলেছেন,
“নবী (সঃ) মাসিকের সময় আমাদের যৌনাঙ্গে কাপড় রাখতে বলতেন। অতঃপর শয্যাসঙ্গী হতেন। তবে তিনি ছিলেন জিতেন্দ্রিয়।” (বুখারি, মুসলিম)
তবুও কাপড় না রেখে যদি ঊরু মৈথুন করে, তবে তা হারাম নয়। (ইবনে বায)
উত্তর দিয়েছেন: শায়খ আব্দুল হামীদ আল ফাইযী আল-মাদানী
লিসান্স: মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদিআরব
(সৌদী আরবের আল-মাজমাআ অঞ্চলের দাওয়াত সেন্টারে কর্মরত দাওয়াত-কর্মী এবং বাংলা ভাষার প্রসিদ্ধ লেখক ও অনুবাদক।)






No comments:
Post a Comment